Top News

বিবাহের লক্ষ্য নিয়ে প্রেম করা কি ইসলামে বৈধ? প্রেম ও বিবাহ: ইসলামের আলোকে বিশদ ব্যাখ্যা

 

প্রেম ও বিবাহ: ইসলামের আলোকে বিশদ ব্যাখ্যা



ইসলামে প্রেম ও বিবাহের মধ্যে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে যা মানব জীবনকে পরিচালনা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সমাজে প্রেমের নামে যে ধরনের সম্পর্ক প্রচলিত, তা নিয়ে ইসলামে বিশেষ সতর্কতা ও নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। প্রেম মানব জীবনের একটি স্বাভাবিক অনুভূতি হলেও, এটি কীভাবে প্রকাশ পাবে এবং পরিচালিত হবে, তা কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।




১. প্রেমের প্রকৃতি ও তার অনুমোদন

ইসলামে ভালোবাসা ও প্রেমকে স্বাভাবিক এবং আবেগপূর্ণ সম্পর্ক হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু এর ধরন এবং উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি প্রেম, বাবা-মা, সন্তান, প্রতিবেশী ও মুসলিম ভাইদের প্রতি ভালবাসা ইসলামে বৈধ এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শারীরিক আকর্ষণ বা যৌন উদ্দীপনা যদি অবৈধ পথে পরিচালিত হয়, তবে তা সম্পূর্ণ হারাম বলে গণ্য হয়।



২. বিবাহ-পূর্ব প্রেমের নিষেধাজ্ঞা

বিবাহ-পূর্ব প্রেমকে ইসলামে সরাসরি হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সূরা আল মায়িদায় বলা হয়েছে:

“স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না।” (সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৫)

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অবৈধ প্রেম বা শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রেম করার সুযোগ ইসলামে নেই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস থেকেও জানা যায় যে, শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও প্রেমের নানা রূপ হারাম হতে পারে। যেমন:

"চোখের ব্যভিচার হলো বেগানা নারীর দিকে তাকানো, আর জিহ্বার ব্যভিচার হলো তার সঙ্গে যৌন উত্তেজিত হয়ে কথা বলা।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২৪৩)

এই হাদিসে আমরা বুঝতে পারি, শুধু শারীরিক সম্পর্কই নয়, এমনকি গোপনে কাউকে দেখে আকর্ষণ অনুভব করাও ইসলামে গুনাহের মধ্যে পড়ে।




৩. শারীরিক সম্পর্কের পাশাপাশি মানসিক প্রেমও হারাম

অনেকেই মনে করেন যে, প্রেম যদি শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া হয়, তবে তা জায়েজ। কিন্তু হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন:

"দুই চোখের ব্যভিচার হলো বেগানা নারীর দিকে তাকানো, কানের ব্যভিচার হলো যৌন উত্তেজক কথা শোনা, আর মুখের ব্যভিচার হলো আবেগময় উত্তেজিত কথা বলা।" (মেশকাত, হাদিস: ৮৬)

এই হাদিসে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, প্রেমের প্রতিটি স্তর – দেখা, কথা বলা, এমনকি কল্পনা করাও যদি যৌন উত্তেজিত বা অবৈধ আকর্ষণের দিকে ধাবিত হয়, তবে তা হারাম।



৪. প্রেমের প্রভাব এবং বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা

একটি গবেষণা পিজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডোনাটেলা মারাজ্জিতি পরিচালনা করেছিলেন, যেখানে সদ্য প্রেমে পড়া যুগলদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তাদের সেরোটোনিনের মাত্রা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সমান। এতে প্রমাণিত হয়, প্রেম মানুষকে মানসিকভাবে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে:

"হে মুমিনগণ, তোমাদের সম্পদ ও সন্তানরা যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে না দেয়। যারা এরূপ করবে, তারাই সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত।" (সুরা মোনাফিকুন, আয়াত ৯)

এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যেকোনো সম্পর্ক বা বিষয় যা আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়, তা ক্ষতিকর এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয়।



৫. প্রেম ও বিবাহ: একমাত্র বৈধ পথ

ইসলামে বিবাহের মাধ্যমেই প্রেমকে পূর্ণতা দেয়া হয় এবং সেটাই একমাত্র বৈধ পথ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"যখন কোনো মুসলমান সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করে, তখন সেটি তার সদকারূপে গণ্য হয়।" (মুসলিম: ১২/১৪, হাদিস: ১০০২)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, বৈধ পথে সঙ্গীকে নিয়ে জীবনযাপন করা এবং তার প্রতি ভালোবাসা দেখানো ইসলামে অত্যন্ত মহৎ কাজ। কিন্তু বিবাহপূর্ব প্রেমকে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ নেই।



৬. ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেমের সতর্কতা

প্রেমের নামে চলমান সম্পর্কগুলোর বেশিরভাগই অবৈধ এবং মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“শয়তান মানুষের মধ্যে এমনভাবে প্রবেশ করে, যেমন রক্ত শরীরের মধ্যে প্রবাহিত হয়।” (সহিহ মুসলিম)

প্রেমের মাধ্যমে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং জিনার পথে প্রলুব্ধ করে। তাই ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।


উপসংহার

ইসলামে বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা জায়েজ নয়, কারণ তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ সম্পর্কের দিকে ধাবিত করে। বেগানা নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা হারাম, এমনকি শারীরিক সম্পর্ক না থাকলেও তা জায়েজ নয়। যদি কারো প্রতি আকর্ষণ বা ভালোবাসা অনুভূত হয়, তবে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী তার পরিবারকে সাথে নিয়ে বিবাহের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। বিয়ে ছাড়া প্রেমের যে কোনো ধরণই শয়তানের প্ররোচনা এবং গুনাহের পথ।

আল্লাহ আমাদের সকলকে গুনাহ থেকে রক্ষা করুন এবং বৈধ পথে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দিন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন