মেয়েদের প্রতি বেয়াদব বা অশালীন আচরণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সুশৃঙ্খল। ইসলামে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয়, এবং সেই সাথে নারীদেরও উচিত আচার-ব্যবহার, পোশাক এবং কথাবার্তায় শালীনতা বজায় রাখা। বেয়াদবি বা অশোভন আচরণের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসে শালীনতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, তবে সংশোধনের প্রক্রিয়া হতে হবে ধৈর্যশীল ও যথাযথ।
ইসলামের নির্দেশনাঃ
কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে নারীদের প্রতি সদাচরণ করতে হবে এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তবে নারীরা যদি কোনও অনৈতিক বা অশোভন আচরণ করে, তবে তাদের সঠিক পথে আনার জন্য নসিহত বা উপদেশ দেওয়া উচিত।
কুরআন এবং হাদিসের দলিল থেকে কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো—
১. নসিহত বা উপদেশ:
কুরআনে বলা হয়েছে:
"তোমরা নিজেদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।"
— (সুরা তাহরিম, ৬:৬)
এর মানে হলো, পরিবারের সদস্যদের সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিতে হবে এবং তাদেরকে ভালো ও শালীন কাজে প্ররোচিত করতে হবে।
২. ধৈর্য এবং দোয়া:
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:
"মহিলারা তোমাদের ভাইয়েরা। তাদের সাথে সদাচরণ করো।"
— (তিরমিযী, হাদিস নং ১১৬৩)
ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নারীদেরকে উপযুক্ত আচরণ শিখানো এবং প্রয়োজনে দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. শালীনতার আদেশ:
কুরআনে আরও বলা হয়েছে:
"মুমিন পুরুষদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। মুমিন নারীদেরও বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।"
— (সুরা নূর, ২৪:৩০-৩১)
এখানে পুরুষ এবং নারীর জন্য শালীনতা ও আত্মসংযমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৪. প্রয়োজনে কঠোরতা:
যদি নসিহত ও উপদেশ ফলপ্রসূ না হয়, তবে কুরআনে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার অনুমতি আছে, কিন্তু তা হতে হবে সীমিত এবং মানবিকভাবে। কুরআনে বলা হয়েছে:
"যদি তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের অবাধ্য হয়, তবে প্রথমে তাদেরকে উপদেশ দাও, তারপর তাদের সাথে শয্যা পৃথক করো, তারপরও যদি তারা সংশোধন না হয় তবে তাদেরকে হালকা আঘাত করো। কিন্তু যদি তারা তোমার আনুগত্য করে, তবে আর কোনো উপায় অবলম্বন করো না।"
— (সুরা নিসা, ৪:৩৪)
তবে এখানে "আঘাত" শব্দটি হালকা এবং মানবিক হওয়া উচিত, যেমনটা হাদিসে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা কোনো ক্ষতি করবে না, বরং শুধুমাত্র শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে।
৫. ইসলামে নারীদের মর্যাদা:
ইসলামে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে এবং তাদের সাথে অশালীন আচরণ করলে কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। মহানবী (সাঃ) নারীদেরকে "পরিবারের মর্যাদার ধারক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের প্রতি সদাচরণ করতে উৎসাহিত করেছেন।
"সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ করে।"
— (তিরমিযী, হাদিস নং ৩৯২১)
ইসলামে পরিণতি:
যদি কোনো নারী অনৈতিক বা বেয়াদব আচরণ করেন এবং তা সংশোধন না করা হয়, তবে আল্লাহর নিকট কঠোর শাস্তি হতে পারে। তবে এখানে প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য করা উচিত সংশোধন এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।
"কেউ যদি আল্লাহর বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং অহংকার প্রদর্শন করে, তবে তার জন্য জাহান্নামের শাস্তি নির্ধারিত।"
— (সুরা নিসা, ৪:১৪)
ইসলাম মূলত শান্তিপূর্ণভাবে সমাজের শৃঙ্খলা এবং ব্যক্তিগত উন্নতির ওপর জোর দেয়। তাই, নারীদের বেয়াদব আচরণ শুধরানোর ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা এবং বিবেচনা প্রধানতম বিষয়।
উপসংহার:
ইসলাম কখনও অহেতুক কঠোরতাকে সমর্থন করে না। বরং নারীদের সাথে শালীন আচরণ এবং ধৈর্যের সাথে তাদের সঠিক পথে নিয়ে আসার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন